পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের করনীয়

 পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের করনীয় অনেক কিছুই। আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। এই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার স্তূপ হয়ে রয়েছে যার ফলে দূষিত হয় বাতাস, পানি ও মাটি। এবং খুব বাজেভাবে নষ্ট হয় পরিবেশের ভারসাম্য।
ছবি :- সংগৃহীত।










দূষিত বাতাস গ্রহণের কারণে নানা ধরনের রোগ বালায় ছড়ায় চারিপাশে। চিপসের প্যাকেট, বাদামের ঠোঙা,ব্যবহার কারা পলিথিন, প্লাস্টিকের টুকরো, ইত্যাদি পচনশীল না হওয়ায় মাটিতে মিশে বা পঁচে যায়না সহজে। এসব আবর্জনা ফেলা হয় নদীত যার ফলে নদীর পানিও দূষিত হয়ে যাচ্ছে, জীবন ধারণ হুমকির মুখে পড়েছে মাছ সহ বিভিন্ন জলজপ্রানীর। তাই চলুন আজকে আমরা জেনে নিব কিভাবে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে রাখবো।

পোস্ট সূচীপত্র:-পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের করনীয়

পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় মানুষের ভূমিকা

আজকে আমাদের এই পরিবেশ নষ্ট বা দূষণ হওয়ার পিছনে মানুষই সবচেয়ে বেশি দায়ী। প্রাণী উদ্ভিদ এবং মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকেই স্বাভাবিক পরিবেশ বলে।এই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পানি, মাটি, বাতাস, প্রাণী ও উদ্ভিদ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণ মানুষও। এই মানুষের উপরেই নির্ভর করবে পরিবেশের সুস্থতা এবং সুন্দরতা, মানব সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্বও পরোক্ষভাবে মানুষের উপরেই নির্ভরশীল।

মানুষ তার চাহিদা পূর্ণ কারার জন্য যেসব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে বা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে  তাতে করে পরিবেশের ভারসাম্য খুব দ্রুত গতিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের উন্নতিও করতে হবে আবার পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করতে হবে, সে জন্য যেগুলি পদ্ধতি চিরস্থায়ী মানুষকে মেনে চলতে হবে, সেগুলো হলো:-
  1. আমাদেরকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে সচেতন হতে হবে। 
  2. বায়ু দূষণ কমানোর যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে।
  3. নবী ভবন যোগ্য শক্তির উপর বেশি নির্ভর করতে হবে।
  4. জৈব বৈচিত্র সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। 
  5. বিষেশ করে প্রতিটি কৃষক তার সম্পদের আবর্তন ও পুনর্ব্যবহার করতে হবে। 
  6. সমাজের প্রতিটি নাগরিক কে পরিবেশের শিক্ষা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা 

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অবশ্যই পালন করতে হবে, তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেসব বিষয় তা হলো : 
  • নিজের এলাকার মানুষের দিকে, যাতে করে তারা ময়লা আবর্জনা স্তূপ করে না রাখতে পারে। যদিওবা
  •  তারা ময়লার স্তূপ করে ফেলে তাহলে আবর্জনা গুলোকে নির্দীষ্ট  সময় ফাঁকা স্থানে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 
  • কয়লা পোড়ানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই সবাইকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • পানি দূষণ রোধ করতে হবে বিশেষ করে নিজ এলাকায় উপস্থিত ব্যবহার  করা জলাশয় গবাদিপশুর স্নান ও জলাশয়ের ধারে প্রাতঃকৃত্য বন্ধ করতে হবে। 
  • রাস্তার ধারে বা পড়ে থাকা ফাকা স্থানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং বন সংরক্ষণ করতে হবে। সঠিকভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে বেআইনি ভাবে কেউ গাছ কেটে ফেলছেকিনা।
  • ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা হর্ণ উচ্চ সুরে বাজিয়ে পরিবেশ দূষণ করছে কিনা বইপত্র, বেতার, দূরদর্শন, ও সোশ্যাল মিডিয়ার  সাহায্য নিয়ে পানি, খাবার, ও বাতাস বিশুদ্ধ রাখা শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষদের সচেতন করতে হবে।

পরিবেশ ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ 

পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে আমি বলবো:-
  1.  ডিজেল বা ফসিল ফুয়েল বার্নিং।
  2.  হিসেবে বলতে পারি গাছপালা কেটে ফেলা।
  3. ওয়াটার বডির এর পরিমাণ কমে যাওয়া।
  4. মানুষ বিভিন্ন উপায়ে ভৌত পরিবেশ কে প্রভাবিত করে অতিরিক্ত জনসংখ্যা, জিবাশ্ম জ্বালানী পুড়ানো এবং বন উজাড়।
এইধরনের পরিবর্তন গুলি জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির ক্ষয়, দরিদ্র বায়ূর গুণমান এবং পান করার অযোগ্য পানির সূচনা করেছে।

জীবাশ্ম জ্বালানী - কয়লা, তেল,এবং গ্যাস বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে অবদানকারী। যা গ্রীনহাউস গ্যাস নর্গমনের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং সমস্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রায় ৯০ শতাংশের জন্য দায়ী।

পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার ৫ টি উপায় 

আমরা খুব সহজে বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে প্রানের পৃথিবীটাকে বাঁচাতে পারি। আমরা প্রতিনিয়ত চলাফেরার সময় যে ভুলগুলো করে থাকি সে-সব ভুল শুধরে নিলেই পৃথিবী এবং প্রকৃতি রক্ষা পেতে পারে।

ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই ৫ টি উপায় মেনে চলতে হবে তা হলো :-
  1. গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান- পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে অক্সিজেনের বিকল্প কিছু নেই। তাই বেশি বেশি গাছ রুপন করতে হবে। গাছের প্রতি সঠিক ভাবে যত্নশীল হতে হবে। প্রয়োজনের ক্ষেত্রে একটি গাছ কাটলে ৫ টি নতুন গাছ রুপণ করতে হবে। এবং আপনার বাড়ির উঠানে বা ফাঁকা স্থানে বেশি বেশি বৃক্ষ রুপণ করে রাখুন। 
  2. বিদ্যুৎ, পানি,গ্যাসের অপচয় বন্ধ করতে হবে- আমরা সাধারণত প্রয়োজনের তুলনায় অনেক সময় বেশি ব্যবহার করে থাকি যা আমরা একটু সচেতন হলেই বাড়তি অপচয় ঠেকানো সম্ভব। একদিকে বিশালসংখ্যক মানুষ তার চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহার করছে আর অপর দিকে কিছু মানুষ পানি,বিদ্যুৎ, গ্যাস না পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। 
  3. প্লাস্টিক ব্যবহার বর্জন করুন- প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থ মাটির সাথে মিশিয়ে যায়না ফলে বছরের পর বছর এগুলো মাটির উপরে বা পানির সাথে থেকে মাটি-পানি-বাতাস দূষিত করছে। প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগ বা মাটির সাথে মিশিয়ে যাবে এমন উপাদান দিয়ে তৈরী থলে ব্যবহার করুন। 
  4. বাইসাইকেল ব্যবহার করুন- কারণ ইঞ্জিলের কালো ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে যায়। আর তা যে কতো পরিমাণ বাতাসের মিশে যাচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। এবং মিশে যাচ্ছে সীসা যা ফুসফুসের ক্যান্সারের বড়ো কারণ। সর্বোপরি পরিবেশ রক্ষার্থে চেষ্টা করুন বাইসাইকেল ব্যবহারে অভস্ত্য হতে। প্রকৃতিবান্ধব জীবন যাপন করুন। 
  5. মানুষের দৈনিন্দন ব্যবহার করা জিনিসপত্র এবং কাগজ- যদি কোনো কাজ ইলেকট্রনিক ডিভাইসেই হয়ে যায় তাহলে কাগজের বদলে ইলেট্রিক মাধ্যমেই সমাধান খুঁজে নিন।এগুলো ছাড়াও যত্রতত্র ময়লা, বানববর্জ্য,প্রণীবর্জ্য, কেমিক্যাল বর্জ্য,হাসপাতালের বর্জ্য,পলিথিন বা অপচনশীল বর্জ্য পুড়িয়ে কালো ধোঁয়া ছড়ানো ইত্যাদি কারণে পরিবেশ দূষণ হয়। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে নিজের ব্যবহার করা জিনিসপত্র দ্বারা পরিবেশ দূষণে প্রভাবিত  না করে।

পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষার গাছপালার গুরুত্ব 

আসলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের বিকল্প কিছু নেই। এক কথায় গাছ হলো প্রকৃতির বায়ু ফিল্টার, যা কার্বনডাই-অক্সাইড এবং অন্যান্য দূষক শোষণ করে এবং বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন সাপ্লাই করে। গাছ বৈশ্বিক উষ্ণতা বা তাপমাত্রাকেও কমাতে সাহায্য করে।এছাড়াও গাছ শহুরে হিট আইল্যান্ড প্রভাব কমাতেও কার্যকরি। 

গাছ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রধাণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রকৃতি তার সমস্ত রত্নভান্ডার উজাড় করে দিয়েছে, আমাদের সকল প্রয়োজন পূর্ণ করে দিয়েছে। তাই মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের নিজস্বতা থেকে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এতে করে প্রকৃতি এবং আমাদের প্রান দু’টি রক্ষা পাবে।

আশা করি উপরের পুরো আর্টিক্যালটি পড়েছেন এবং জানতে পেরেছেন কিভাবে পরিবেশ এবং পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা কতরতে হবে। এইরকম আরো নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টি ফলো করে সাথে থাকুন ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url